কালিয়াকৈরে ভোগান্তির শেষ নেই দুই কি.মি মাটির রাস্তা জুড়ে

কালিয়াকৈরে ভোগান্তির শেষ নেই দুই কি.মি মাটির রাস্তা জুড়ে

শেয়ার করুন

কর্দমাক্ত রাস্তার ছবি।। সালাহ উদ্দিন সৈকত, কালিয়াকৈর, গাজীপুর।।

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার ফুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের মনতলা উত্তর পাড়া আবুল মিস্ত্রীর বাড়ি থেকে আঞ্চলিক সড়কের হাসি মার্কেট পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তাটি সম্পূর্ণ কাঁচা। রয়েছে ছোট-বড় অনেক খানাখন্দ। তাছাড়া প্রতি বছর বর্ষায় কর্দমাক্ত হয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। রাস্তাটি ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের মনতলা গ্রাম হতে ফুলবাড়িয়া বাজার রাস্তার সংযোগ সড়ক বলেও জানা গেছে। এ রাস্তাটি বেহাল দশার কারণে আশেপাশের সাত থেকে আট গ্রামের গ্রামের কয়েক হাজার সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরমে। এই এলাকার মানুষ এরকম অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে রাস্তাটি পাকা করার জোর দাবি জানান।

সরেজমিন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের মনতলা উত্তরপাড়া আবুল মিস্ত্রির বাড়ি হইতে ফুলবাড়ীয়া টু বাজাইল আঞ্চলিক সড়কের হাসি মার্কেট পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার রাস্তা আজ পর্যন্ত পাকা হয়নি। আশেপাশের কয়েক গ্রামের হাজার হাজার মানুষ প্রতিনিয়ত ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছে। হঠাৎ করে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে কিংবা জরুরি মুহূর্তে অ্যাম্বুলেন্স অথবা অন্য কোন পরিবহন এই খানাখন্দ ও কর্দমাক্ত রাস্তার কারণে প্রবেশ করতে পারেনা। যে কারণে এই এলাকার সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা নিতে খুবই অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
কৃষি প্রধান এলাকা হওয়ার কারণে বেশিরভাগ কৃষক তাদের উৎপাদিত পণ্য নিকটস্থ স্থানীয় বাজার নিতে পারছে না এই বেহাল সড়ক এর কারণে। অনেক সময় পণ্য স্থানান্তরের ক্ষেত্রে এই রাস্তায় তাদের দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয় অনেক সময় পরিবহন উল্টে যায়। এই রাস্তাটি দ্রুত পাকা হলে উপজেলার অন্যতম হাট ফুলবাড়ীয়া বাজারের সাথে সুন্দর একটি যোগাযোগের মাধ্যম হবে। যাতে করে এলাকার কৃষক সহজেই তাদের উৎপাদিত পণ্য ফুলবাড়িয়া হাটে বিক্রি করতে পারবে। তাতে করে সাধারন মানুষের অর্থনীতির চাকা ঘুরবে। এই এলাকার সাথে উপজেলা শহর সহ অন্যান্য এলাকার সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্কটা আরো গভীর হবে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পাবে। রাস্তাটি কাচা থেকে পাকা করার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে বারবার আলোচনা করেও কোনো লাভ হয়নি। তারা শুধু বারবার আশ্বাস দিয়েছেন কিন্তু বাস্তবায়ন করে দেননি।

এই রাস্তার কাজ শুরু করার ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন কিংবা উপজেলা প্রশাসন কোন উদ্যোগই নেয়নি। দীর্ঘদিন যাবৎ রাস্তার এই অবস্থা নিয়েই অনেক কষ্টে চলাচল করছেন এলাকার জনগণ। তাদের রাস্তা পাকা করা এই সময়ের ন্যায্য দাবি বলে মনে করেন তারা।

স্থানীয় এম এম পি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি হাফিজ উদ্দিন বলেন, এই ১৮০০ মিটার রাস্তা এলাকার মানুষের প্রাণের দাবী। একটু বৃষ্টি হলেই এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করা যায় না। অত্র এলাকার হাজার হাজার মানুষ ভোগান্তির শিকার হয়। শুকনো সিজন আসলে স্থানীয় প্রতিনিধিরা মাটি ফেলে রাস্তাটির সংস্কার করেন কিন্তু বর্ষায় আবার সেই আগের অবস্থা। দীর্ঘদিন চেষ্টার পরও রাস্তার কোন সুরাহা হয়নি। রাস্তাটি দ্রুত পাকা করা হোক করা হোউক এলাকার মানুষের এখন একটাই দাবি।

স্থানীয় ৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন জানান, আমি নিজে উপজেলা প্রশাসনের নিকট এই ১৮০০ মিটার রাস্তা সংস্কারের জন্য একটি দরখাস্ত জমা দিয়েছি। যাতে মন্ত্রীমহোদয়ের স্বাক্ষরও রয়েছে। আমরা যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি তারা কেউই এলাকার সাধারণ মানুষদেরকে এই রাস্তা বিষয়ে কোন সদোত্তর দিতে পারছিনা। প্রতিদিনই আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা জনসাধারণের কটুক্তির স্বীকার হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই এলাকার যুব সমাজের কেউ না কেউ এই রাস্তা নিয়ে ফেসবুকে ট্রল করছে। এ যেন বাতির নিচেই অন্ধকার। রাস্তাটি দ্রুত পাকা চাই।

স্থানীয় বাসিন্দা আলমগীর হোসেন জানান, নির্বাচনের আগে সকলেই এ রাস্তা করে দেওয়ার আশ্বাস দেয় নির্বাচন শেষ হয়ে গেলে কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না। আমাদের এলাকার রাস্তা দেখে মনে হয় এটা গাজীপুর জেলায় না এটা পাহাড়ি কোন জেলার রাস্তা।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আলমগীর হোসেন বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকা হিসেবে এই রাস্তার জন্য আমি নিজে উপজেলা পরিষদে দরখাস্ত করেছি দুই বছর আগে কিন্তু আজ পর্যন্ত এর কোন সুরাহা হয়নি। যোগাযোগ করা হলে বারবার আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে। তাই আমি সহ এলাকার সকল মানুষের দাবী রাস্তাটি দ্রুত পাকা করা হোক।

ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম বলেন, ফুলবাড়ী ইউনিয়নে অনেক রাস্তা কাচা। তার মধ্যে এটি অন্যতম। উপজেলা পরিষদ ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে এ বিষয়ে আবেদন করা হয়েছে এবং বারবার যোগাযোগ করলেও কোনো সমাধান হয়নি। বারবার আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর মন্ত্রীমহোদয়ের সাথে স্থানীয় প্রতিনিধিদের মিটিং আছে, ওই মিটিংয়ে এই বিষয়টি আবারও উপস্থাপন করবো। এই কাঁচা রাস্তাটি দ্রুত পাকা করা এখন সময়ের দাবি।

কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ বলেন, এ রাস্তা সম্পর্কে আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত এই কাঁচা রাস্তা পাকা করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।