অচিন বৃক্ষ! তিনশত বছরেরও বেশি পুরনো

অচিন বৃক্ষ! তিনশত বছরেরও বেশি পুরনো

শেয়ার করুন

 

বাঁশতলী গ্রামের অচিন বৃক্ষ
বাঁশতলী গ্রামের অচিন বৃক্ষ

।। সালাহ উদ্দিন সৈকত,কালিয়াকৈর,গাজীপুর ।।

একটা অচেনা বৃক্ষ! প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম- জন্মের পর থেকে বৃক্ষটা কে দেখছে। কেউ বলতে পারেনা এটা কোন জাতীয় বৃক্ষ? কি এর নাম? সবাই শুধু এখানে আসে,ছায়া তলে বসে,ছবি তোলে,অবাক হয়ে দেখে কিন্তু এর সঠিক নাম আজ পর্যন্ত কেউ বলতে পারেনি। সবাই অচেনা বৃক্ষ বলেই চিনে। এটাকে ঘিরে রয়েছে নানা ধরনের লৌকিক কল্প কাহিনী।

সেই বৃক্ষটি গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার বাঁশতলী গ্রামে আনুমানিক ৩শ বছরের বেশি বয়সী হবে। যে গাছটিকে গ্রামের মানুষ অচিন গাছ বলেই সম্বোধন করেন। তবে বৃক্ষ গবেষকেরা জানিয়েছেন এটির নাম ‘সাদা পাকুড়’। যার আকার-আকৃতিতে বট গাছের মতোই বিশাল ও বিস্তৃত।

২০১৫ সালের ২২ মে বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলন এর আমন্ত্রণে বিপন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণি সংরক্ষণ ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ এর উদ্যোগে বৃক্ষটির নিচে একটি সভার আয়োজন করা হয়। বৃক্ষটির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য দীর্ঘদিন পর্যালোচনার পর ইপ্যাক ফাউন্ডেশন বৃক্ষটির নাম দেয় ‘সাদা পাকুড়’। সভায় ইপ্যাক ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি জেনারেল আখতারুজ্জামান চৌধুরী অচিন বৃক্ষটির ‘সাদা পাকুড়’ নামকরণ ঘোষণা করেন।

সেই নামকরণকারী গবেষক ও বিপন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণী সংরক্ষণ ফাউন্ডেশনের সাবেক মহাসচিব আখতারুজ্জামান চৌধুরী জানান, গাছটির নামকরণ করা হয়েছে ‘সাদা পাকুড়’। এটি অতি বৃহৎ পত্র ঝরা বৃক্ষ। গাছটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়াতে দেখা যায়। বাংলাদেশে বিরল। দেশের আর কোথাও এ রকম গাছ আছে কি না, এখনো জানা যায়নি।

কাঁচারস গ্রামের বাসিন্দা স্কুল শিক্ষিকা জাফরিন সুলতানা বলেন,ছোটবেলায় গল্প শুনেছিলাম এই গাছ সম্পর্কে,এক মহিলা গাছের ডাল কেটে চুলায় জ্বালিয়ে রান্না করেছিল,পরদিন সকালে ওই মহিলার মৃত্যু হয়। এরপর থেকে আমরা একটু ভয় পেলেও,কিন্তু ঐ গাছের কাছে যেয়ে উপরে উঠতাম ও খেলাধুলা করতাম কিন্তু ডালপালা ও পাতা কখনও ছিড়তাম না।

ওই গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুল খালেক বলেন, জ্ঞান হবার পর থেকে এ যাবৎ গাছটিকে এমনই দেখছি। ছোটবেলায় দাদার মুখেও শুনেছি তিনিও নাকি জ্ঞান হওয়ার পর থেকে গাছটিকে এমনই দেখেছেন। আমরা আগে অচিন গাছ,বড় গাছ বলেই ডাকতাম। কয়েক বছর আগে জানলাম গাছটির নাম ‘সাদা পাকুড়’।

চৈত্র-বৈশাখ মাসে এ গাছে পাতা ঝরে গিয়ে নতুন পাতা গজায়। পাতা মসৃণ ও ডিম্বাকৃতি ফলার মতো। গাছটিতে ছোট ছোট গোলাকার সাদা রঙের ফল ধরে। এই ফল পাখির প্রিয় খাবার। সাধারণত এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে গাছটিতে ফল ধরে।

মৌচাক ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আরিফুল ইসলাম বলেন, তাদের গ্রামের আলেফ মিয়ার বাড়ির সামনে প্রায় দুই বিঘা জমির ওপরে ওই গাছটির অবস্থান। গাছটি নিয়ে নানা রহস্য ও লোককাহিনী রয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ গাছটি দেখতে আসেন। সব সময় ছায়া থাকায় গ্রামের মানুষ একটু প্রশান্তির খোঁজে ওই গাছের নিচে ছুটে আসে। এ কারণে গাছটির চারিপাশে সুন্দর বসার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।