নড়াইলে ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির স্ত্রী শুভ্রা মুখার্জির মৃত্যু বার্ষিকী...

নড়াইলে ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির স্ত্রী শুভ্রা মুখার্জির মৃত্যু বার্ষিকী পালিত

শেয়ার করুন

suvra mukharje
।। কার্ত্তিক দাস, নড়াইল ।।
নড়াইলে বিনম্র শ্রদ্ধায় ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির স্ত্রী শুভ্রা মুখার্জির ৬ষ্ঠ মৃত্যু বার্ষিকী পালন করা হয়।  বুধবার নড়াইল সদর উপজেলার তুলারামপুর গ্রামে তাঁর মামা বাড়ির শ্রীশ্রী গোপাল মন্দির ও কালী মন্দির চত্বরে শুভ্রা মুখার্জি ফাউন্ডেশন দিন ব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন করে। কর্মসূচির মধ্যে ছিল শুভ্রা মুখার্জির প্রতিকৃতিকে পুষ্পমাল্য অর্পণ,গীতা পাঠ,নতুন বস্ত্র বিতরণ,নাম সংকীর্ত্তণ,স্মরণ সভা। জেলা প্রশাসনসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ এ কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণ করেন।
ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা কার্তিক ঘোষের সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মো.হাবিবুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায়,নড়াইল পৌর মেয়র আনজুমান আরা,তুলঅরামপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো.বুলবুল আহম্মেদ,রন্জন কুমার প্রমুখ।
শুভ্রা মুখার্জির জীবনী থেকে জানা যায়,তিনি ১৯৪০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর নড়াইল সদর উপজেলার ভদ্রবিলা গ্রামে বাবা অমরেন্দ্র ঘোষ ও মা মীরা রানী ঘোষের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন । ২০১৫ সালের ১৮ আগস্ট আজকের এইদিনে ভারতের নয়াদিল্লির একটি সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
শুভ্রার শৈশবের প্রথম দিকটা নড়াইলের ভদ্রবিলা গ্রামে (পিত্রালয়) কাটলেও পরবর্তীতে মামাবাড়ি তুলারামপুরে চলে যান। মামাবাড়ি থেকে স্থানীয় চাঁচড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। পরে ১৯৫৫ সালের দিকে মায়ের সঙ্গে ভারতের কলকাতায় চলে যান । নয় ভাইবোনের মধ্যে শুভ্রা ছিলেন দ্বিতীয়। পরবর্তীতে তার অন্য ভাই-বোনেরা ভারতে চলে গেলেও নড়াইলের ভদ্রবিলা গ্রামে বসবাস করেন শুভ্রার ভাই কানাই লাল ঘোষ।
এদিকে, শুভ্রার মামাতো ভাইয়েরা বসবাস করেন নড়াইল সদর উপজেলার তুলারামপুর গ্রামে। প্রণব মুখার্জির সাথে বিয়ের পর নড়াইলের মেয়ে ‘গীতা ঘোষ’ পরিচিতি পান ‘শুভ্রা মুখার্জি’ হিসেবে। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রিধারী শুভ্রা পেশায় ছিলেন একজন শিক্ষক। তিনি রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ছিলেন।
লেখক হিসেবেও তাঁর খ্যাতি ছিল। তিনি ‘চোখের আলোয়’, ‘চেনা অচেনায় চীন’, ‘‘INDIRA GANDHI IN MY EYES’’ (ইন্দিরা গান্ধী ইন মাই আই’স) প্রবন্ধ গ্রন্থসহ গল্প ও ফিচার লিখেছেন।
শুভ্রা মুখোপাধ্যায় ‘চোখের আলোয়’ গ্রন্থে নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেছেন, বয়স তখন ১৪, প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বয়স ২২ বছর। সেই বয়সে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। শুভ্রা ও প্রণব মুখার্জির দুই ছেলে অভিজিৎ ও সুরজিৎ এবং মেয়ে শর্মিষ্ঠা মুখার্জি মুন্নি। ভারতে নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত তারা।
শুভ্রা মুখার্জির মামাতো ভাই নড়াইলের তুলারামপুর গ্রামের কার্তিক ঘোষ জানান, ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির মামাশ্বশুরবাড়ি আমাদের তুলারামপুর গ্রামে। বিশেষ করে গীতা দিদির শৈশব কেটেছে আমাদের বাড়িতেই। দিদি তুলারামপুরে থেকে চাঁচড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়েছেন দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। তারপর চলে যান ভারতে। কার্তিক আরো বলেন, ১৯৯৫ সালে মেয়ে শর্মিষ্ঠা মুখার্জি মুন্নিকে নিয়ে দিদি আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন। তবে, সে সময় সাথে ছিলেন না আমাদের জামাইবাবু প্রণব মুখার্জি। পরে ২০১৩ সালের ৫ মার্চ জামাইবাবুকে (প্রণব মুখার্জি) সঙ্গে করে নড়াইলের ভদ্রবিলার বাড়িতে আসেন গীতা দিদি।
তুলারামপুর এলাকার ৯৬ বছরের বায়োবৃদ্ধ নারী কল্পনা বিশ্বাস বলেন, শুভ্রা আমাদের কাছে ‘গীতা’ নামে পরিচিত ছিল। নড়াইলের সেই ‘গীতা’ নামের মেয়েটিই ভারতবাসীর কাছে ‘শুভ্রা মুখার্জি’ নামে পরিচিত। ছোটবেলায় গীতা আমাদের পুকুরে গোসল করতো। সমবয়সীদের সাথে খেলায় মেতে উঠত। বাগানে আম কুড়াতো। গান গাইতে পারতো। ছোট বেলায় স্কুলসহ নানা অনুষ্ঠানে গান গেয়েছে।
প্রধান অতিথি বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মো.হাবিবুর রহমান বলেন, এলাকার মানুষের কাছে তিনি গীতা দেবী নামে পরিচিত হলেও বিশ্ববাসীর কাছে তিনি শুভ্রা মুখার্জি নামে সমধিক পরিচিত ছিলেন। নিজের মেধা, মনন, দক্ষতা ও প্রজ্ঞা দিয়ে গ্রামের সাধারণ মেয়ে থেকে হয়েছিলেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির স্ত্রী। ভারতের ফার্ষ্ট লেডি। মধুর সময় এবং জীবন কেটেছে দুজনের। এখন দুজনই পরপারে। আমরা সকলেই সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি তাঁরা দুজনই যেন স্বর্গবাসী হন।