ফরিদপুরে রাক্ষুসী পদ্মা গিলে খাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম

ফরিদপুরে রাক্ষুসী পদ্মা গিলে খাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম

শেয়ার করুন

faridpur nodi vangon pic-1

।। কামরুজ্জামান সোহেল, ফরিদপুর ।।
ফরিদপুরে নতুন করে পদ্মা নদীর ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারন করেছে। গত কয়েকদিনের ব্যবধানে ফরিদপুর সদর উপজেলার ডিক্রিরচর ৩ টি গ্রামের কয়েকশ বাড়ী নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে। বর্তমানে নদী ভাঙ্গন ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। হুমকির মধ্যে রয়েছে স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা সাইক্লোন সেন্টার, কয়েকশ বসত বাড়ী, ফসলী জমিসহ নানা স্থাপনা।

গত মাসে হঠাৎ করে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙ্গন শুরু হয় পদ্মার তীরবর্তী ডিক্রির চর ও নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে। সেই সময় নদীতে ডুব চর থাকায় পদ্মার পানি ডুবো চরে বাঁধা পেয়ে দিক পরিবর্তন করে আঘাত হানে বসতভিটা ও ফসলী জমিতে। নদী ভাঙ্গনের কারনে সেই সময় ড্রেজার দিয়ে ডুবো চর কাটা হয়। ফলে ভাঙ্গন কিছুটা কমে। কিন্তু ১৭ জুলাই শনিবার থেকে হঠাৎ করেই ভাঙ্গন শুরু হয়। ভাঙ্গনে তিন দিনের ব্যবধানে ডিক্রিরচর ইউনিয়নের তিনটি গ্রামের ৩০টি পরিবারের কমপক্ষে ৮০টি বসতভিটা নদী গর্ভে বিলিন হয়। দুটি গ্রামের তিন একর ফসলী জমি ও ৩৩ মিটার এইচ বি বি রাস্তাও চলে গেছে নদীগর্ভে।

ভাঙ্গনের কারনে পল্লী বিদ্যুতের কয়েকটি খুটি ভেঙ্গে গেলে ওইসব গ্রামের অর্ধশতাধিক পরিবারের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ভাঙ্গনের তীব্রতা এতটাই ভয়াবহ যে বাড়ী ঘর সরিয়ে নিতেও পারছেন না অনেকেই। হঠাৎ করে নদী ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারন করায় আতংক বিরাজ করছে নদীপাড়ের হাজারো মানুষের মাঝে। ডিক্রিরচর ইউনিয়নের নাজির বিশ^াসের ডাঙ্গী, আইজুদ্দিন মাতুব্বরের ডাঙ্গী, খিজির বিশ^াসের ডাঙ্গী এলাকার কয়েক জনের সাথে কথা হলে তারা জানান, হঠাৎ করেই নদী ভাঙ্গন শুরু হয়। তারা বাড়ী ঘরের জিনিষপত্র সরিয়ে নিতেও সময় পাননি। মুহুর্তের মধ্যে নদীতে চলে যায় বসতবাড়ী ও গাছপালা। শত বছরের পুরনো বসতভিটাও হারিয়েছেন কেউ কেউ। বসতভিটা হারিয়ে একেবারেই নিঃস্ব হয়েছেন বেশীর ভাগ পরিবার। ভাঙ্গনে বসতভিটা হারিয়ে কয়েকটি পরিবারকে সড়কে টিন-পলিথিন দিয়ে মাধা গোজার ঠাই করে নিয়েছেন। বৃষ্টির মধ্যে এসব পরিবার বেশ নাজুক ও অসহায় অবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। বর্তমানে তিনটি গ্রামের শতাধিক পরিবার ভাঙ্গনের হুমকির মুখে রয়েছে।

ডিক্রিরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান মিন্টু জানান, নদী ভাঙ্গনের কারনে প্রতি বছর গ্রামের পর গ্রাম বিলিন হয়ে যাচ্ছে। নদী ভাঙ্গন ঠেকাতে টেকসই ও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহন এখন সময়ের দাবী। তিনি বলেন, ভাঙ্গনে যারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তাদের তালিকা করা হচ্ছে। যারা বসত বাড়ী হারিয়েছেন তাদের বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের তরফ থেকে দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নদী ভাঙ্গনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আশ^াস দিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ। তিনি বলেন, নদী ভাঙ্গনরোধে টেকসহ পদক্ষেপ নিতে উধ্বর্তন কতৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বর্তমানে ভাঙ্গনরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।