টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে ছাত্রী গণধর্ষণ: চালক হেলপারসহ ৫জন গ্রেপ্তার

টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে ছাত্রী গণধর্ষণ: চালক হেলপারসহ ৫জন গ্রেপ্তার

শেয়ার করুন


মো. নাসির উদ্দিন, টাঙ্গাইল  প্রতিনিধি :

টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে ঢাকার আইডিয়াল ‘ল” কলেজের ছাত্রী রুপা খাতুনকে গণধর্ষণ করে হত্যা ঘটনায় ঐ বাসের চালক হেলপারসহ ৫জনকে গ্রেপ্তার করেছে মধুপুর থানা পুলিশ। গত শুক্রবার রাতে ঐ তরুণীকে বগুড়া থেকে ছোয়া পরিবহনে ময়মনসিংহ যাচ্ছিল। রাতে বনের সড়ক থেকে এক তরুণীর লাশ উদ্ধার করেছিল মধুপুর থানা পুলিশ। শনিবার নিহত তরুণীর পরিচয় না পেয়ে অজ্ঞাত হিসেবে তার লাশ দাফন করা হয়।

সোমবার রাতে মধুপুর থানায় গিয়ে অজ্ঞাতনামা ঐ তরুণীর পড়নের সালোয়ার কামিজ দেখে সনাক্ত করে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ করেছে নিহত তরুণীর বড় ভাই হাফিজুর রহমান। অজ্ঞাত পরিচয়ের সেই তরুণীর নাম রুপা খাতুন। সে ঢাকার আইডিয়াল ‘ল” কলেজে এলএলবি বিষয়ে অধ্যয়নরত ছিল। সে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার আছানবাড়ী গ্রামের জিলহাস প্রামাণিকের মেয়ে।

মধুপুর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আলমগীর কবির জানান যায়, শুক্রবার রাত ১১ টার দিকে টাঙ্গাইল ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কের মধুপুর উপজেলার পঁচিশ মাইল এলাকার বনাঞ্চলের রাস্তার ধারে এক তরুণীর রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকার খবর পায় মধুপুর থানা পুলিশ। ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশের সুরত হাল রিপোর্ট তৈরি করে লাশ থানায় নিয়ে আসে।

শারীরিকভাবে নির্যাতনের পর হত্যা করে অপরাধীরা নিরাপদ ভেবে অজ্ঞাত ওই তরুণীর লাশ বনের সড়কে ফেলে রেখে যায় ধারণা করে পুলিশ।
তরুণীর বড় ভাই গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের সূত্র ধরে সোমবার (২৮ আগস্ট) রাতে মধুপুর থানায় উপস্থিত হয়ে লাশের ছবি ও পড়নের কাপড় দেখে পরিচয় সনাক্ত করে। পরবর্তীতে পরিবারের সদস্যদের দেওয়া তথ্যর উপর নির্ভর করে অভিযানে নেমেছে পুলিশ।

নিহত তরুণী বড় ভাই হাফিজুর প্রামাণিক জানান, তার ছোট বোন রুপা খাতুন অনার্স শেষ করে ঢাকার আইডিয়াল ‘ল” কলেজে এলএলবি বিষয়ে অধ্যয়নরত ছিল। পাশাপাশি সে শেরপুর জেলায় ইউনিলিভার বাংলাদেশের প্রমোশনাল ডিভিশনে কর্মরত ছিল। গত শুক্রবার শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিতে সে বগুড়া যায়। পরে পরীক্ষা শেষে বগুড়া থেকে ময়মনসিংহগামী ছোয়া পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো ব-১৪-৩৯৬৩) একটি বাসে তার এক সহকর্মীর সাথে যাত্রা করে।

তার সেই সহকর্মীর কর্মস্থল ঢাকায় হওয়ায় সে এলেঙ্গাতে নেমে যায় এবং রুপা ঐ বাসেই ময়মনসিংহ যাচ্ছিল। কিন্তু সে সঠিক সময়ে ময়মনসিংহ না পৌঁছায় তার সহকর্মীরা মোবাইলে ফোন করলে এক যুবক ফোনটি রিসিভ করে এবং রুপা ভুল করে ফোনটি ফেলে রেখে গেছে বলে জানিয়ে কেটে দেয়। এরপর থেকে ফোনটি বন্ধ রয়েছে।

শনিবার সকালে কর্মস্থলে না পৌঁছায় ইউনিলিভার বাংলাদেশ এর শেরপুর অফিস থেকে রুপার বড় ভাই হাফিজুর প্রামাণিক এর মোবাইলে রুপা কর্মস্থলে না ফেরার বিষয়টি অবগত করে তারা। পরবর্তীতে রুপার মোবাইলে যোগাযোগ করতে না পেরে তার বড় ভাই ময়মনসিংহ কোতোয়ালী মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে।

মধুপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সফিকুল ইসলাম, ওসি (তদন্ত) নজরুল ইসলাম, অরণখোলা পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আমিনুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, লাশটি পাওয়ার পর প্রাথমিক সুরত হাল রিপোর্ট দেখেই এটিকে শারীরিক নির্যাতনের পর হত্যা করে ফেলে রাখা হয়েছিল উলে¬খ করে ঘটনার পরদিনই অজ্ঞাতদের আসামী করে একটি মামলা দায়ের করা হয়।

এরপর থেকেই ঘটনার রহস্য উদঘাটনে পুলিশী তৎপরতা অব্যাহত থাকে। সোমবার রাতে নিহত তরুণীর পরিচয় সনাক্ত হওয়ার পর তার বড় ভাইয়ের দেয়া তথ্যর উপর ভিত্তি করে অভিযান শুরু করে পুলিশ। এর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে ঐ বাসের চালক হাবি (৩৫)সহ ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।