জীবন সংগ্রামে অদম্য চা বিক্রেতা পঙ্গু শওকত হোসেন

জীবন সংগ্রামে অদম্য চা বিক্রেতা পঙ্গু শওকত হোসেন

শেয়ার করুন

 

চা বিক্রেতা শওকত হোসেন
চা বিক্রেতা শওকত হোসেন

।। সালাহ উদ্দিন সৈকত, কালিয়াকৈর, গাজীপুর।।

পঙ্গুত্ব বরণ করে ও জীবন সংগ্রামে থেমে নেই গাজীপুর কালিয়াকৈর উপজেলার ভানের টেকি গ্রামের মোঃ শাহজাহান মিয়ার ছেলে মোঃ শওকত হোসেন (৪২)। শওকত হোসেন পঙ্গু হলেও অন্যের উপর ভরসা না করে চা বিক্রি করেন। ২০০৩ সাল থেকে চা বিক্রেতা হিসেবে কাজ শুরু করেন।

সুস্বাধু চা বিক্রেতা হিসেবে শওকত একজন সুপরিচিত মুখ। পঙ্গু হয়েও থেমে নেই তার কর্মজীবন। সংসারে একমাত্র উপার্জনকারী সে। কাজের মাঝেই তার পরম আনন্দ।

শওকত হোসেন একজন পঙ্গুত্ব বরণ কারী শারীরিক প্রতিবন্ধী। বর্তমানে সে ভাড়া থাকে। কোন জমিজমা নেই। একসময় অন্য সবার মতো সেও হাঁটাচলা করত। সে পেশায় ড্রাইভার ছিল। গাড়ি চালিয়ে সচ্ছল জীবনযাপন করতো। কিন্তু ২০০১ সালে বৈদ্যুতিক শকে তিনি গুরুতর আহত হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার দুই পা কেটে ফেলতে হয়। এরপর থেকে তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। কি করবে ভেবে না পেয়ে সকলের পরামর্শে কালিয়াকৈর বাস স্ট্যান্ড এলাকায় ২০০২/২০০৩ সালে চা দোকান করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এক মেয়ে ও এক ছেলে এবং স্ত্রীসহ ৪জনের সংসার। চলতে কষ্ট হলেও কোন রকম চলছে। তিনি আরেকটু ভালো থাকার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

বর্তমানে সে চা বিক্রেতা হিসেবে নিজেকে একজন কর্মমুখী মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছে।

শওকত কালিয়াকৈর বাস স্ট্যান্ড এলাকায় ভালো ও সুস্বাদু একজন চা বিক্রেতা হিসেবে পরিচিত। তার চা খেতে দূর-দূরান্ত থেকে লোক আসে। বাস স্ট্যান্ড এলাকায় তার রয়েছে ব্যাপক সুনাম। সবার কাছে খুবই আদরের শওকত হোসেন।

কালিয়াকৈর বাস স্ট্যান্ড এর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা আকবর আলী বলেন, শওকতের দোকানে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসে চা খেতে। সবাই তার চায়ের প্রশংসা করে। আমরাও শওকতকে সহযোগিতা করি। সে পঙ্গু হয়েও নিজের সংসারের দায়িত্ব নিয়েছে।

গাজীপুর পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান বলেন, পঙ্গু হয়েও সে নিজের কর্ম-দক্ষতায় পুরো সংসারের খরচ বহন করতে উদ্যোগী হয়েছে- এটা সমাজের জন্য গৌরবের। শওকতকে দেখে আরো অনেক মানুষ স্বাবলম্বী হতে উৎসাহ পাবে। শারীরিক প্রতিবন্ধী যাদের দোকান আছে তাদের যদি আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। তাহলে তারা তা দিয়ে উন্নতি করতে পারবে। শারীরিক প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থানের আওতায় আনলে এবং দোকান করার জন্য আর্থিক সহায়তা দিলে নিজেদের সংসারের খরচ বহন করতে সক্ষম হবে।

কালিয়াকৈর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন,শওকত হোসেন এর মতো শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সহযোগিতায় সমাজসেবা কার্যালয় দায়বদ্ধ। উনি সহযোগিতার আবেদন করলে আমরা অবশ্যই তার পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবো।

কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ বলেন, শওকত হোসেন সহযোগিতার আবেদন করলে আমাদের উপজেলা সমাজসেবা অধিদফতর এর মাধ্যমে অবশ্যই সহযোগিতা করা হবে।