লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে জনবল সংকটে ২০লাখ মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত

লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে জনবল সংকটে ২০লাখ মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত

শেয়ার করুন

Lakshmipur hospital pic (1) 20.09.2018মো.কাউছার. লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:

লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল প্রধানমন্ত্রীর আড়াইশ শয্যার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু এখনো সেই ৫০ শয্যার মধ্যেও অনেক পদ শূন্য জনবল সংকটে চিকিৎসা কার্যক্রম মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও জনবল নিয়োগ না দেয়ার কারণে জেলার ২০ লাখ মানুষ আধুনিক চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রধান মন্ত্রী গত ২০১৭ সালে ১৪ মার্চ লক্ষ্মীপুর স্টেডিয়াম মাঠের জনসভায় লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালকে ১শ শয্যা থেকে আড়াই”শ শয্যায় উন্নীত করার ঘোষণা দিয়েছেন।

সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল ২০০৩ সালের জুলাই মাসে ৫০শয্যা থেকে ১শ” শয্যার অনুমোদন দেয়া হয়। ১৪ বছর পার হলেও ১শ” শয্যার পদ সৃষ্টি করে নতুন কোন জনবল নিয়োগ দেয়া হয়নি। লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে বর্তমানে ৫০শয্যার কার্যক্রম চলছে, এ হাসপাতালে ২১জন কন্সালটেন এর পদ রয়েছে। এর মধ্য অর্থপেডিক ও চক্ষু ছাড়া বাকি ১৮টি পদে ডাক্তার নিয়োজিত আছেন। ৭০জন নার্স- ব্রাদারের মধ্য কর্মরত আছেন ৩০জন বাকি ৪০জনের পদ খালী রয়েছে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর এম এল এস এস, আয়া ও সুইপারের ১৮টি পদের মধ্যে ৯টি পদ খালি রয়েছে। এছাড়া রেডিওলোজিষ্ট পদটি দীর্ঘদিন থেকে খালি পড়ে থাকায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের কোন ধরনের আলট্রাসোনগ্রাফী পরীক্ষা হয়না।
বহি:বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী আবদুল আজিজ ও মরিয়ম বেগম এই প্রতিবেদকে জানান, জেলা শহরের হাসপাতালের কারণে প্রতিদিন সকালে  প্রায় ৫ শতাধিক রোগী জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে চিকিৎসা নিতে আসেন। এর মধ্য বিভিন্ন বিভাগে শতাধিক রোগী ভর্তি হয়। রোগীর সংখ্যা বেশী হওয়ার কারণে আমরা যে ভাবে চিকিৎসা পাওয়ার কথা সে ভাবে পাচ্ছি না। সকাল বেলায় কাউন্টার গুলোতে জ্যাম লেগে থাকে। রোগীরা ঠিকমত টিকেট পায়না। এই সুযোগে দালালরা তাদের দৌরাত্ম দেখিয়ে রোগীদের হয়রানী করতে থাকে। প্রতিদিন ১টার পরে বহি:বিভাগের টিকেট বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়। রোগী যতক্ষণ পর্যন্ত থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত টিকেট দেয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ তাদের।
Lakshmipur hospital pic (2) 20.09.2018
ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি শিশু রোগীর মা নুরনাহার বেগম জানান, আমার ২ বছরের মেয়েকে নিয়ে ২দিন ধরে হাসপাতালে আছি। বাথরুমের অবস্থা খুবই করুন, সব সময় অপরিষ্কার থাকে।

রোগীর স্বজনদের আরো অভিযোগ, দরজা-জানালা ও পানির টেপ গুলো ভাঙ্গা তাই ব্যবহার করা যাচ্ছে না। প্রতিটি বেডে একজন রোগী চিকিৎসা নেয়ার নিয়ম। কিন্তু দুই-তিনজন ভর্তি রোগী প্রতিটি বেডে থাকতে হচ্ছে। নোংরা পরিবেশে বাথরুম,টয়লেট অপরিচ্ছন্ন কারণে রোগীরা আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অভিযোগ তাদের। এ ছাড়া সব সময় পানি সমস্যা লেগে থাকে,হাসপাতালের পানির পাম্পটির একে বারে নাজুক অবস্থা। পাম্প থেকে উঠানো পানি ময়লা ,দুর্গন্ধ ও লবণ যুক্ত তাই ব্যবহার করা যায়না। নিরুপায় হয়ে কর্তৃপক্ষ পাম্পের সংযোগ পুকুরে দেয়। বর্তমানে হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট ডাক্তার,নার্স ও রোগীসহ সকলে ওই পুকুরের পানি ব্যবহার করছে। এতে রোগীসহ সকলে পানি বাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের সিনিয়র নার্স অর্চনা রানী জানান, সব সময় ৭০/৮০ জন রোগী থাকে একা ডিউটি করে সমলাতে খুব কষ্ট হয়। আমাদের রোগী বেশী কিন্তু ৪০জন নার্সে পদ খালি । তাই সব সময় ২/৩ জনের ডিউটি ১জনে করতে হয়।

সদর হাসপাতালের আরএমও ডা.আনোয়ার হোসেন জানান, অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও মূল ৫০শয্যার জনবল দিয়েই হাসপাতালের কার্যক্রম চলছে, তার মধ্যে অনেক গুলো পদ খালি রয়েছে। যে কারণে চাহিদা অনুযায়ী সেবা দেয়া অনেক সময় সম্ভব হয় না। তবুও আমরা সব সময় আন্তরিক ভাবে সেবা দেয়ার জন্য সাধ্যের মধ্যে চেষ্টা করছি। বিশেষ করে আয়া ও সুইপারের ১৮টি পদের মধ্য ৯টি পদ খালি থাকায় বার বার রোগী ও স্বজনরা অপরিচ্ছন্নতার বিষয়ে অভিযোগের সুযোগ পায়।

লক্ষ্মীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মোস্তফা খালেদ আহম্মদ জানান, আমি আসার পূর্বে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের অনেক সমস্যা ছিল । বর্তমানে জনবল সংকট ছাড়া তেমন কোন সমস্যা নেই, ইতি মধ্যে দালালদের দৌরাত্ম কমিয়েছি। ডাক্তারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছি। দরজা-জানালা ও পানির টেপ গুলো ভাঙ্গা ছিল মেরামত করেছি। জনবল সংকটের সমস্যা সমাধানের জন্য বার বার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে, আশাকরি দ্রুত এর সমাধান হবে।