ভারত থেকে চাল আমদানির ফলে কুষ্টিয়ার অধিকাংশ মিলে চাল উৎপাদন বন্ধ

ভারত থেকে চাল আমদানির ফলে কুষ্টিয়ার অধিকাংশ মিলে চাল উৎপাদন বন্ধ

শেয়ার করুন

চাল rice শরীফুল ইসলাম কুষ্টিয়া, প্রতিনিধি :

একশত কোটি টাকার চাল নিয়ে বিপাকে পড়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজনগরে চালকল মালিকরা। জেলার ৩১ অটো ও ২৮০ হাসকিং মিলে মজুদ রয়েছে প্রায় ১৫ হাজার মেট্রিক টন চাল। মাসের পর মাস এসব চাল মজুদ থাকায় কোটি কোটি টাকা লোকসানের আশঙ্কা করছেন মিল মালিকরা।

এই মোকাম থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রতিদিন দুইশত ট্রাক চাল সরবরাহ করা হলেও কয়েকমাস যাবত এখান থেকে প্রতিদিন ২০ ট্রাক চালও বিক্রি হচ্ছে না। চাল বিক্রি না হওয়ায় অধিকাংশ মিলার উৎপাদন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। এতে বেকার হয়ে পড়েছে জেলার ১১ হাজার চাতাল শ্রমিক। মিলারদের দাবী, ভারত থেকে কম দামে নিন্মমানের চাল আমদানী করায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ভারত থেকে চাল আমদানী না কমালে দেশে উৎপাদিত চালের বাজার প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে না। এভাবে আর কিছু দিন চললে দেশের সব চাতাল কল বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশংকা করছেন মিল মালিকরা। এদিকে কোটি কোটি টাকার পুরাতন চাল গুদামে মজুদ থাকায় নতুন ধান বাজারে আসলেও কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না মিলাররা। ফলে উঠতি বোরো ধান প্রতিমনে দুই থেকে তিনশত টাকা কম দামে বিক্রি হচ্ছে।
চাল rice
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারত থেকে চাহিদার অতিরিক্ত হাজার হাজার টন ভারতীয় চাল কোন শুল্ক ছাড়াই আমদানি করে বাজারজাত করছে ব্যবসায়ীরা। আমদানি করা এসব চালও নিম্নমানের। দেশি চালের চেয়ে ভারতীয় নিন্মমানের চাল পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজিতে প্রায় ৩ থেকে ৪ টাকা কম দামে। ফলে দেশের বাজার এখন পুরোটাই ভারতীয় চালের দখলে। এতে বড় ধাক্কা খেয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ চালের মোকাম কুষ্টিয়ার চালকলগুলো। এ অবস্থায় প্রায় ১৫ হাজার মেট্রিক টন পুরাতন চাল নিয়ে বিপাকে পড়েছে জেলার মিল মালিকরা। অবিক্রিত প্রায় এক’শ কোটি টাকার চাল মাসের পর মাস গুদামে পড়ে আছে। অনেকটা বাধ্য হয়েই জেলার অধিকাংশ মিল মালিক চাল উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। এ কারণে চাতালপাড়া বলে খ্যাত খাজানগরে কমেছে কুলি শ্রমিক মজুরদের হাঁকডাক। বেকার হয়ে পড়েছে প্রায় ১১ হাজার নারী-পুরুষ চাতাল শ্রমিক।

কুষ্টিয়া জেলা চাল কল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন বলেন, ধান ক্রয় করে চাল বাজারজাত করতে গেলে মিলারদের কোটি কোটি টাকা পুঁজি খাটিয়ে আয়কর ও ব্যাংকের সুদ গুনতে হয়। অথচ শুধু এলসি করে  কোনো প্রকার আয়কর না দিয়েই ভারত থেকে হাজার হাজার টন চাল কম দামে আমদানি করে বাজারজাত হচ্ছে। ফলে ধ্বংস হচ্ছে  দেশি ধান ও চালের বাজার।

তিনি বলেন, প্রতিবছর এমন সময় এই মোকাম থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০টি চালের ট্রাক যেত। সেখানে এখন যাচ্ছে ২০ থেকে ২৫টি। আমাদের উৎপাদিত চাল গুদামেই পড়ে থাকছে। মিল মালিকরা লোকসান গুনতে গুনতে বাধ্য হয়ে উৎপাদন বন্ধ করে দিচ্ছে।

খাজানগরের ফ্রেশ এগ্রো ফুডের মালিক ওমর ফারুক জানান, বাজারে কম দামে ভারতীয় চাল বিক্রি হচ্ছে। যে কারণে ঢাকার সকল দোকানে দেশি পুরাতন চাল অবিক্রিত হয়ে পড়ে আছে। ব্যবসায়ীদের কাছে থাকা পুরাতন চাল বিক্রি না হলে তারা আমাদের কাছ থেকে নতুন করে চাল ক্রয় করছে না। এসব কারণে আমাদের চাল বিক্রি অনেক কমে গেছে। বিপুল পরিমান পুরাতন চাল গুদামে মজুদ থাকায় নতুন ধান কেনার আগ্রহ দেখাচ্ছে না মিল মালিকরা।
কুষ্টিয়া জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুস সামাদ বলেন, মিলাররা ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছেন। একদিকে চালের দাম কম, অন্যদিকে ব্যাংক সুদের কারণে মিলাররা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এ বিপর্যয় শুধু মিল মালিক বা চাল ব্যবসায়ীদের নয়, এর প্রভাব পড়ছে দেশের চাল শিল্পে।

তিনি বলেন, প্রত্যেকটি অটো রাইচ মিলে এক থেকে দেড়শ এবং হাসকিং মিলে ২০ থেকে ৩০ জন শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাদের মজুদকৃত চাল অবিক্রিত থাকায় বাধ্য হয়ে মিলে উৎপাদন বন্ধ রাখতে হচ্ছে। যে কারণে জেলার প্রায় ১১ হাজার চাতাল শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে।

বড় বাজারের চাল ব্যবসায়ী মোফাজ্জেল জানান, ভারতীয় আমদানিকৃত মিনিকেট চাল ২৫ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ১৩৫০ থেকে ১৪০০ টাকা। দেশি মিনিকেট চাল ২৫ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ১৪৫০ টাকা।