এক নজরে অপারেশন স্ট্রম ২৬

এক নজরে অপারেশন স্ট্রম ২৬

শেয়ার করুন

a21e07b0efa10870e4a6582008d4904f-Attack-2

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজধানীর কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন গার্লস হাই স্কুলের পাশের পাঁচ নম্বর সড়কের জাহাজ বিল্ডিং নামে একটি বাসায় ‘জঙ্গি আস্তানায়’ যৌথবাহীনির ‘স্টর্ম-টোয়েন্টি সিক্স’ অভিযানে নয় ‘জঙ্গি’ নিহত হয়েছে।

রাত ১১টা (সোমবার):
সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জঙ্গিবিরোধী অভিযান ‘ব্লক রেড’ এর অংশ হিসেবে সোমবার ‍রাত ১১টায় কল্যাণপুর এলাকায় অভিযানে নামে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ। বেশ কয়েকটি মেসে অভিযান চালানোর পর তারা ফুটওভার ব্রিজ সংলগ্ন ৫ নম্বর রোডের মেসগুলোতে অভিযানে যায়।

রাত ১২টা-১টা:
রাত ১২টার দিকে ৫ নম্বর রোডের ওই সাততলা বাড়িটিতে অভিযানে যায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। বাড়িটির পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তলায় মেস ছিলো। সেই মেসগুলোতে অভিযানে গেলে সেখানে থাকা জঙ্গিরা বুঝতে পেরে পুলিশকে লক্ষ্য করে হাতবোমা নিক্ষেপ করে। এতে এক পুলিশ সদস্য আহত হন। তৎক্ষণাৎ বিষয়টি তারা মিরপুর জোনের উপ-কমিশনারসহ (ডিসি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানান।

গভীর রাত পৌনে ৩টা:
ঘটনাস্থল থেকে কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান আরও জোরদার করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনারের নির্দেশে মিরপুর জোনের ডিসি কাইয়ুম উজ্জামানের নেতৃত্বে পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ঘটনাস্থলে আসে র‌্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) বিপুলসংখ্যক সদস্যও। এরপর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আবারও অভিযানে গেলে জঙ্গিদের সঙ্গে গুলিবিনিময় হতে থাকে।

রাত সোয়া ৩টা:
পুলিশের সঙ্গে গুলিবিনিময়কালে হাস‍ান নামে জঙ্গিদের একজন আহত হয়। তাকে আটক করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

সে পুলিশকে জানায়, মেসে আরও ৯ জঙ্গি সদস্য রয়েছে। তার কাছ থেকে তথ্য পেয়ে এ নিয়ে বৈঠকে বসে আইন-শৃঙ্খল‍া বাহিনী। যেহেতু ওই বাড়িটির অন্যান্য ফ্ল্যাটে সাধারণ লোকজন থাকে, সেহেতু তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে রাতের পরিবর্তে দিনের আলোতেই অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ভোর ৫টা ৫১ মিনিট (মঙ্গলবার):

সিদ্ধান্ত অনুসারে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের বিশেষায়িত টিম সোয়াটের নেতৃত্বে ভোর ৫টা ৫১ মিনিটে অভিযান শুরু হয়। অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘স্টর্ম টোয়েন্টি সিক্স’। এতে সহযোগিতা করে পুলিশের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, র‌্যাব ও ফায়ার সার্ভিস। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে থেমে চলতে থাকে গুলিবিনিময়।

ভোর ৬টা ৫১ মিনিট:

এক ঘণ্টা পর ভোর ৬টা ৫১ মিনিটের দিকে শেষ হয় সোয়াটের নেতৃত্বাধীন ‘স্টর্ম টোয়েন্টি সিক্স’। ঘটনাস্থলেই মারা যায় ৯ জঙ্গি।

সকাল সাড়ে ৭টা:
সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নিহত জঙ্গিদের পোশাক-আসবাব সবকিছুতেই গুলশানে হামলাকারীদের সঙ্গে মিল রয়েছে। তদন্ত শেষে এ সম্পর্কে বিস্তারিত বলা যাবে। জঙ্গিরা গুলি করতে করতে পালাতে চেষ্টা করেছিলো। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে হ্যান্ড গ্রেনেডও ছুড়ে। তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক থাকায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এই জঙ্গি আস্তানায় বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক রয়েছে। রাজধানী ঢাকায় বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা ছিলো তাদের।

এসময় তার সঙ্গে ছিলেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও ডিবির যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম।

সকাল ৮টা:

সকাল ৮টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিট। তারা সেখানে পৌঁছালে ৮টা ১৭ মিনিটে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে অভিয‍ানে নেতৃত্ব দেওয়া সোয়াট। সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছেই তাদের তৎপরতা শুরু করে।

c178914ea629e362d526c121c3553a96-11

কল্যাণপুরের ৫ নম্বর সড়কের গার্লস হাইস্কুলের পাশে তাজ মঞ্জিল নামের ছয় তলা একটি ভবন। এটিকে স্থানীয়রা চেনেন ‘জাহাজ বিল্ডিং’ নামে, যেখানে বেশির ভাগ ফ্ল্যাট মেস হিসেবে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। বাড়িওয়ালা থাকেন দোতলায়। ভবনের পঞ্চম তলায় এর মধ্যে পঞ্চম তলার সাতটি কক্ষ সন্দেহভাজন জঙ্গিরা ভাড়া নিয়েছিল বলে জানতে পারে পুলিশ। এরই ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান চলে। নিহত হয় ৯ জন। আহত ১ জন এবং ১ জন পালিয়ে যায়।

তাৎক্ষণিকভাবে নিহত নয় জনের পরিচয় জানা না গেলেও ওই ভবন থেকে জিহাদি বই, বোমা ও অস্ত্র উদ্ধারের কথা জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার শেখ মারুফ হাসান।

ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ কমিশনার মো. সানোয়ার হোসেন বলেন, যারা নিহত হয়েছেন, তাদের পরনে কালো পাঞ্জাবি ছিল। ওই বাসা থেকে আরও বেশ কিছু নতুন কালো পাঞ্জাবি ও কালো পতাকা উদ্ধার করা হয়েছে। ওই ফ্ল্যাটে একটি গ্রেনেড ও একটি পিস্তল পাওয়া গেছে।

অভিযানের শুরুতে পুলিশ চারদিক থেকে ঘেরাও করে ওই ভবনে ঢোকার চেষ্টা করলে পাঁচ তলার আস্তানা থেকে কয়েকজন জঙ্গি নেমে এসে ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি দিয়ে গুলি ছুড়তে শুরু করে বলে জানান মীরপুর থানার ওসি।

পুলিশের আইজিপি একেএম শহীদুল হক বলেছেন, হতাহতরা সবাই নিষিদ্ধ জঙ্গি দল জেএমবির সদস্য বলে প্রাথমিকভাবে তাঁরা ধারণা করছেন।