৯ কিশোরকে ভারতে পাচারকালে গ্রেপ্তার-২

৯ কিশোরকে ভারতে পাচারকালে গ্রেপ্তার-২

শেয়ার করুন

Thakurgaon__Pacharkari__Arrest-02।। ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি ।। দীর্ঘদিন ধরে ঠাকুরগাঁওয়ের সীমান্তবর্তী এলাকার নিম্ন আয়ের ও অসচ্ছল পরিবারের কিশোরদের টার্গেট করে ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ভারতে পাচার করে তাদের দিয়ে জোরপূর্বক সীমান্ত এলাকায় মাদক পাচার, অস্ত্র পাচার সহ নানা ধরণের অপরাধমূলক কাজ করাতে বাধ্য করতো একটি সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারি চক্র। এতোদিন বিষয়টি জানাজানি না হলেও সম্প্রতি এ ধরণের কর্মকান্ডের খবর জানতে পেরে গোপনে তৎপরতা চালায় জেলা ডিবি পুলিশ।
গত সোমবার ডিবি পুলিশ সোর্সের মাধ্যমে জানতে পারে একজন মানব পাচারকারি বেশ কয়েকজন কিশোরকে ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে থ্রি-হুইলারে (পাগলু) করে বালিয়াডাঙ্গী অভিমুখে রওনা হয়েছেন। খবর পেয়েই বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চার রাস্তার মোড়ে অবস্থান নেয় ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) নবিউল ইসলামের নেতৃত্বে একদল ডিবি সদস্য। বালিয়াডাঙ্গী চৌরাস্তায় সন্দেহাতীত একটি পাগলুকে থামিয়ে জিজ্ঞাবাদ করলে ঘটনার সত্যতা পায় ডিবি। এসময় মানবপাচারকারি সদস্যের মূলহোতা মো: নাঈম (২৫) কে গ্রেফতার সহ ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে নিয়ে আসা ৯ কিশোরকে উদ্ধার করা হয়। পরে মানব পাচারকারি নাঈমের দেওয়া তথ্য মোতাবেক ঠাকুরগাঁও শহরের বিআরটিসি কাউন্টারের সামনে থেকে মো: আতিকুর রহমান (৩৩) নামে অপর মানব পাচারকারী চক্রের আরো এক সদস্যকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ।
এ ঘটনায় ডিবি পুলিশ দুইজনকে আসামী করে বালিয়াডাঙ্গী থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন। সোমবার রাতে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন জেলা ডিবি পুলিশের ওসি মো: মোসাব্বেরুল হক। আটক নাঈম হরিপুর উপজেলার ঝাড়বাড়ী (ডাবরী ক্যাম্প) নামক এলাকার মো: জবেদ আলীর ছেলে ও আতিকুর রহমান ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আরাজী ঢাঙ্গীপুকুর এলাকার মো: আব্দুল্লাহ’র ছেলে।
মানব পাচারকারিদের হাত থেকে উদ্ধার হওয়া কিশোররা হলো, হরিপুর উপজেলার রুহিয়া গ্রামের মো: কাশেম এর ছেলে সমিরউদ্দিন (১৩), একই গ্রামের সিরাজুলের ছেলে মো: রুবেল (১৫), আবু হানিফের ছেলে মাহাবুব আলম (১৭), জসরত আলীর ছেলে মো: আশরাফুল (১৬), মো: রহিমউদ্দিনের ছেলে আ: বাকি (১৭), একই উপজেলার পাঁচঘরিয়া নামক এলাকার আজিজুর রহমানের ছেলে শহীদ আলী (২৬), বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বিশ্রামপুর গোয়ালটুলি গ্রামের কেরামত আলীর ছেলে বাবুল হোসেন (২৮), একই এলাকার তাইউদ্দিনের ছেলে বেলাল হোসেন (১৬) ও মো: রব্বানীর ছেলে মো: মোস্তাকিম (২০)। গতকাল মঙ্গলবার উদ্ধারকৃত কিশোরদের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জবানবন্দী গ্রহন শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
ডিবি পুলিশের এসআই নবিউল জানান, একটি সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারি চক্র জেলার সীমান্তবর্তী এলাকার দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের পরিবারের কিশোরদের বিনা খরচে ভারতে ভালো বেতনে চাকরীর প্রলোভন দেখিয়ে ভারতে পাচার করে আসছে এমন খবর জানতে পেরে সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বৃদ্ধি সহ পুলিশি কার্যক্রম জোরদার করে ডিবি পুলিশ। সেই ধারাবাহিকতায় সোমবার গোপনে ডিবি পুলিশ অবগত হয় মানবপাচারকারি চক্রের এক সদস্য পাগলুতে বেশ কয়েকজন কিশোরকে ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে বালিয়াডাঙ্গী অভিমুখে রওনা হয়েছে।
এসআই নবিউল আরও বলেন, তারা তদন্ত করে জানতে পেরেছেন এই সমস্ত সহজ-সরল কিশোরদের ভারতে পাচার করার পর তাদের দিয়ে জোরপূর্বক সীমান্তে মাদক পাচার, অস্ত্র পাচার সহ নানা ধরণের অপরাধমূলক কাজ করানো হয়। তিনি বলেন, এটি একটি বিশাল সংঘবদ্ধ নেটওয়ার্ক। অনেক বড় বড় রাঘব-বোয়াল এতে জড়িত রয়েছেন। আমরা কাউকেই ছাড় দেবো না, সকলকেই আইনের আওতায় আনবো।