সাতক্ষীরায় মেয়ের হাতে মা খুন !

সাতক্ষীরায় মেয়ের হাতে মা খুন !

শেয়ার করুন

41524254_555321701590830_39546247244------------------------3625472_nএম কামরুজ্জামান, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা থানার নগরঘাটা গ্রামে মেয়ের হাতে মা মমতাজ বেগম (৫০) খুন হয়েছে। মেয়ের লোহার রডের আঘাতে মা মমতাজ নিহত হয় বলে স্থানীয়রা জানায়। সোমবার রাতে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে এবং মঙ্গলবার ময়না তদন্ত শেষে লাশ দাফন করা হয়েছে। নিহত মমতাজ খাতুন নগরঘাটা গ্রামের মৃত আব্দুস সবুর সরদারের স্ত্রী। তবে মেয়ে টুম্পার দাবী, তার মা ষ্টোকে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।

স্থানীয়রা জানান, বেশ কয়েক বছর আগে মমতাজ বেগমের স্বামী আব্দুস সবুর সরদার মারা গেছে। নিহতের স্বামী পরিত্যক্তা মেয়ে টুম্পা খাতুন সোমবার দুপুরে পারিবারিক কলহের জেরধরে তার মা মমতাজ খাতুন (৫০) কে ঝগড়ার এক পর্যায়ে লোহার রড দিয়ে সজোরে মাথায় ও ঘাড়ে আঘাত করে। এতে মমতাজ খাতুন জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সাতক্ষীরার চায়না বাংলা হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু রোগীর অবস্থা খারাপ দেখে তারা ভর্তি করতে রাজি হয়নি। পরে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল ভর্তি করে। সেখানে তার অবস্থার আরো অবনতি হলে তাকে খুলনার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথিমধ্যে  সন্ধ্যা ৭ টার দিকে তার মৃত্যু হয়। রাতেই তার লাশ গ্রামের বাড়িতে এনে টুম্পা প্রচার করতে থাকে, তার মা ষ্টোকে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। স্থানীয়রা জানতে পেরে পাটকেলঘাটা থানায় খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ওই রাতেই লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। মঙ্গলবার দুপুরে ময়না তদন্ত শেষে পুলিশ নিহতের পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করে। মঙ্গলবার বাদ আছর জানাজার নামাজ শেষে তাকে পারিবারিক কবর স্থানে দাফন করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মেয়ে টুম্পা (২৪) প্রায় তার মাকে মারধর করতো। স্বামীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদের পর থেকে টুম্পা এলাকায় বেপরোয়া চলাফেরা করে। উশৃঙ্খল জীবন ছিল তার। তার একমাত্র ভাই শরীফও নেশাগ্রস্ত। টুম্পার একটি ৩ বছর বয়েসের ছেলে রয়েছে। মেয়ের বেপরোয়া চলাফেরা পছন্দ করতো না তার মা মমতাজ বেগম। সোমবার সকাল ৮ টার দিকে এনিয়ে গণ্ডগোলের জেরধরে টুম্পা তার মাকে লোহার রড দিয়ে ঘাড়ে ও মাথায় আঘাত করে । এর পর মা কয়েক বার বমি করে। পরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। আর জ্ঞান ফিরেনি। বাড়ির লোকজন তার মা কে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। তারা জানায়, এই হত্যাকাণ্ডকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে ইতোমধ্যে মাঠে নেমেছে নিহতের মেয়ে টুম্পা। মা হত্যার দায় থেকে এ যাত্রায় রক্ষা পেতে বিভিন্ন মহলে দৌড়-ঝাপ শুরু করছে সে। ক্ষমতাসীন দলের একাধিক প্রভাবশালী নেতা ও কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তার সাথে আগে থেকে টুম্পার রয়েছে উঠা-বসা। সেই সব রাজনৈতিক নেতা ও কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তার সহযোগিতা নিয়ে মা হত্যাকাণ্ডের এই ঘটনা থেকে এ যাত্রায় বাঁচার চেষ্টা করছে টুম্পা।
এদিকে, নিহতের মেয়ে টুম্পা জানায়, সোমবার সকালে তার মা বাড়িতে ষ্টোক করে। পরে তাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে খুলনায় নেওয়ার পথিমধ্যে তার মায়ের মৃত্যু হয়।

এদিকে, সোমবার রাতে একই থানার ঝড়গাছা গ্রামের একটি ডোবা থেকে গোপাল ঘোষ (৫২) এর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার গায়ে আঘাতে চিহ্ন রয়েছে।

পুলিশ জানায়, একই থানার ঝড়গাছা গ্রামের গোপাল ঘোষ সোমবার সকালে  জমিতে ধান দেখার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেননি। অনেক খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে বাড়ির পাশে একটি বিলের ডোবায়  তার মরদেহ ভাসতে দেখে পুলিশকে খবর দেয় স্থানীয়রা। পুলিশ তার মরদেহ সোমবার সন্ধ্যায় উদ্ধার করে। তার শরীরে আঘাতের চিহৃ রয়েছে। তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে ডোবায় ফেলে দেয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পাটকেলঘাটা থানার ওসি (তদন্ত) মো: শরিফুল ইসলাম জানান, দুপুরে ময়না তদন্ত শেষে নিহতের পরিবারের কাছে মমতাজ বেগমের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। বাদ আছর জানাজার নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় জিডি হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের দেবর হাফিজুর রহমানকে আটক করা হয়েছে। তিনি বলেন, মমতাজ বেগমের গায়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে দাবী করা হচ্ছে, পানির কলের পাশে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে।

তালা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার অপু সরোয়ার জানান, পুলিশ পৃথক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। মরদেহ দুটি উদ্ধার করে ময়না তদন্ত  সম্পন্ন করা হয়েছে। লাশ দুটির গায়ে একাধিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে এখন কিছু বলা যাচ্ছে না। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর বিস্তারিত জানা যাবে বলে তিনি জানান।