মহাসড়ক জনমানবহীন, অলি গলিতে ব্যাপক আড্ডা

মহাসড়ক জনমানবহীন, অলি গলিতে ব্যাপক আড্ডা

শেয়ার করুন

received_1697930063750611
।। সালাহ উদ্দিন সৈকত,কালিয়াকৈর,গাজীপুর ।।

সারাদেশে সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধের পঞ্চম দিন আজ। করোনা সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় গত শুক্রবার (২৩ জুলাই) থেকে এই কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। এই সময়ে মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি ও সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এ কারণে প্রধান সড়কে জরুরি যান চলাচল এবং লোক সমাগম কম হলেও পাড়া মহল্লায় স্বাভাবিক জনজীবন চলতে দেখা গেছে। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত। মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) কালিয়াকৈর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এসব চিত্র দেখা যায়।

সরেজমিনে কালিয়াকৈরের মৌচাক বাজার,শফিপুর বাজার, পল্লীবিদ্যুৎ বাজার, চন্দ্রা ত্রিমোড়, কালিয়াকৈর বাজার এলাকা ঘুরে দেখে গেছে, আগের দুই দিনের মতো আজও সড়ক বেশ ফাঁকা। তবে গত দুই দিনের তুলনায় কিছুটা মানুষের আনাগোনা বেড়েছে। সেইসঙ্গে কিছু প্রাইভেট যানবাহন, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, পিকআপ ছাড়া অন্য যানবাহন চলতে দেখা যায়নি। কিছু কিছু ব্যবসা সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান খোলা থাকায় সে সব প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা ব্যক্তিগত গাড়ি অথবা রিকশায় চলাচল করছেন।

সফিপুর বাজার এলাকার অলিগলিতে দোকানপাট গত চার দিনের তুলনায় একটু বেশি খোলা দেখা গেছে। মানুষের উপস্থিতিও বেশি। পুলিশের টহল অলিগলিতে না থাকায় ইচ্ছেমতো নিজেদের মতো ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে বহু মানুষকে। অনেকের মুখে কোনও মাস্ক দেখা যায়নি। তবে মহাসড়কে কিছুসংখ্যক পুলিশকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। তাদের তৎপরতা ছিল ভালো। এতে করে যে যার মতো চলাচল করছে।

রাখালিয়াচালা বাজার এলাকায় বেশ কয়েকজন আড্ডা দিতে দেখা গেছে। তাদের একজন সজিবুল ইসলাম। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাসায় একা একা সময় কাটাতে আর ভালো লাগছে না। তাই বন্ধুদের ফোন করে এই জায়গায় আসতে বলেছি। একটু সময় কাটাতে। এখন বসে একটু গল্প করছি।’

ডাল কিনতে দোকানে এসেছেন জাহিদুল ইসলাম। বিস্কুট, চানাচুরসহ অন্যান্য জিনিস কিনতে দোকনে শফিক আহমেদ। আর দুধ কেনার জন্য এসেছেন আসাদুল। তাঁরা প্রত্যেকেই প্রতিবেশী। দোকানে কেনাকাটা করতে এসে মেতে উঠেছেন আড্ডায়। দোকানে মাস্ক পরে এলেও আড্ডায় গল্প করার সময় কারও মুখে ছিল না মাস্ক। একটু পর পাশের চায়ের দোকানে গিয়ে চলে তাদের আড্ডা।

সফিপুর পশ্চিম ও পূর্ব পাড়ায় এমন ঘটনা প্রতিদিনকার। সরকার ঘোষিত লকডাউনের মধ্যে দোকানে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে এসে এভাবেই জমে উঠে আড্ডা। এভাবেই মানুষজন সকালে, বিকালে নিত্যপণ্য কেনার জন্য দোকনে আসেন, আর চায়ের দোকানগুলো আড্ডা চলে শাটার নামিয়ে। নানান বয়সী মানুষ আড্ডা দিচ্ছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। মূল সড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান থাকলেও পাড়া মহল্লায় অভিযান না থাকায় মানুষের চলাফেরা অনিয়ন্ত্রিত।

IMG_20210727_172056পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায় দেখা যায়, প্রধান সড়কে যানবাহন তুলনামূলকভাবে কম। তবে অলিগলিতে মানুষের স্বাভাবিক চলাচল দেখা গেছে। কেউ সকালের নাস্তা কিনতে কিংবা কেউ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে বাড়ি থেকে বের হয়েছেন। তবে এলাকার ভেতরে স্বাস্থ্যবিধি মানতে নারাজ সাধারণ মানুষ। প্রধান সড়কে মাস্ক পরে চলাচল করলেও অলিগলিতে মাস্ক পরার প্রতি উদাসীনতা লক্ষ করা গেছে।

বাসার কাছে চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছিলেন রুবেল। তিনি বা তার সঙ্গে থাকা কারো মুখে মাস্ক নেই। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাসার নিচে তো তাই আর পরিনি। এলাকার থেকে বের হলে অবশ্যই পরি।’

সকাল থেকে কালিয়াকৈরের প্রধান সড়কগুলোয় যান চলাচল ছিল একেবারেই সীমিত। প্রয়োজন ছাড়া বের হলেই পড়তে হচ্ছে পুলিশের জেরায়। রাস্তার মোড়ে মোড়ে পুলিশের চেকপোস্ট। মূলত লকডাউনের মধ্যে দু-একটি প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, রিকশা ও অ্যাম্বুলেন্স চলতে দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তায় পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি, র‍্যাব, আনসার এবং সেনা সদস্য মোতায়েন রয়েছে। বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ প্রাইভেটকার থামিয়ে পরিচয়পত্র যাচাই করছিলেন তারা। সত্যতা যাচাই না হলেই গুণতে হচ্ছে জরিমানা।

সালনা হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম মোহাম্মদ ফারুক বলেন, ‘যারা মহাসড়কে লকডাউন অমান্য করছে তাদের জরিমানা করা হচ্ছে। প্রয়োজনে আটক করে তাদের চালান করে দেওয়া হবে।’

এ প্রসঙ্গে কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ বলেন, আমাদের কয়েকটি টিম মাঠে কাজ করছে। আমরা যখন অভিযান পরিচালনা করতে যাই তখন তারা কিভাবে যেন খবর পেয়ে যায়,এতে দোকানপাট বন্ধ করে পালিয়ে যায়, তারপরও আমরা সতর্কভাবে দৃষ্টি রাখছি,আমাদের ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান অব্যাহত থাকবে।