বর্ষার শুরুতেই নৌকা তৈরীতে ব্যস্ত সদরপুরের কাঠমিস্ত্রীরা

বর্ষার শুরুতেই নৌকা তৈরীতে ব্যস্ত সদরপুরের কাঠমিস্ত্রীরা

শেয়ার করুন

faridpur nouka pic
 ।। কামরুজ্জামান সোহেল, ফরিদপুর ।।
ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার চরাঞ্চলের যোগাযোগের একমাত্র বাহন নৌকা তৈরীর
হিড়িক পড়েছে। উপজেলা সদরের সাড়ে সাতরশি বাজার, সদরপুর বাজার,
পিঁয়াজখালী বাজার ও আকটেরচর বাজারে বর্তমানে নৌকা তৈরির কারিগরেরা
নৌকা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সদরপুরের বিভিন্ন হাটের নৌকা
মাদারীপুর, গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে।
ফরিদপুরের চরাঞ্চলের যোগাযোগের একমাত্র বাহন হচ্ছে নৌকা। বর্ষা এলেই চরের
মানুষের জিবনসঙ্গি হিসাবে ব্যবহারিত হয় এসব নৌকা। এমনকি বর্ষার
মৌসুমে বাড়ি থেকে বের হতে হলে নৌকার কোন বিকল্প নেই চরের মানুষের। ঐ
সকল নৌকা দিয়ে চরের মানুষ বর্ষা মৌসুমে মাছ শিকার ও গরু-ছাগলের ঘাস
কেটে জীবন কাটায়। চরাঞ্চলের মানুষ এক বছর ব্যবহার করে পরের বছর আবার নতুন
নৌকা কিনে থাকে। তাই প্রতি বছর বর্ষা এলে এখানে নৌকা তৈরীর হিড়িক
পড়ে যায় উপজেলার বিভিন্ন বাজারজুড়ে। সম্প্রতি সদরপুরের বিভিন্ন এলাকা
ঘুরে দেখা গেছে, কারিগরেরা নতুন নৌকা তৈরি এবং পুরাতন নৌকা মেরামতে
ব্যস্ত সময় পার করছে। উপজেলার চরমানাইড় এলাকার সফিকুল ইসলাম, মনির মাতুব্বর
জানান, গ্রামাঞ্চলে বর্ষা মৌসুমে নৌকা ছাড়া তাদের চলাচলের কোন গতি
নেই। ফলে প্রতি বছরই তারা নৌকা কিনে থাকেন। এ বছর নৌকার দাম অনেক
বেশী বলে জানান তারা। গত বছর তারা যে নৌকা কিনেছেন তিন থেকে চার হাজার
টাকার মধ্যে সেই একই নৌকা এখন কিনতে হচ্ছে ১ থেকে দুই হাজার বেশী
টাকায়। আকার ভেদে নৌকা বিক্রি হচ্ছে তিন থেকে সাত আট হাজার টাকায়।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সদরপুর উপজেলার চন্দ্রপাড়া, চরমানাইড়,
চরনাসিরপুর, আকোটেরচর এলাকায় বর্ষায় ৪ থেকে ৫ মাস বা নিচু এলাকায় এর
চেয়েও দীর্ঘ সময় ধরে পানিবন্দি থাকে। এসব পানিবন্দি মানুষের চলাচলের একমাত্র
মাধ্যম নৌকা। তাই বর্ষা এলেই এলাকা বিভিন্ন ধরনের নৌকার কদর বেড়ে যায়।
সঙ্গে কদর বাড়ে নৌকা তৈরির কারিগরদেরও। জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে শুরু হয় নতুন নৌকা
তৈরি আর পুরাতন নৌকা মেরামতের কাজ। চৌধুরীর হাট এলাকার লুৎফর কাড়াল,
জামাল শিকদার কান্দি গ্রামের আকাব্বর জঙ্গী, চন্দ্র পাড়া এলাকার লতিফ হাওলাদার ও
একই এলাকার মোসলেম কাজী বলেন, বর্ষা মৌসুমে তাদের একমাত্র নৌকাই
বাঁচার সম্বল। নৌকা বিক্রির সাথে জড়িত সাড়ে সাতরশি বাজারের শুশান্ত বাড়ৈ,
পিয়াজখালী হাটের মোহন বাড়ৈ ও আকটেরচর বাজারের দীনেশ মিস্ত্রী জানান,
অতীতে তারা সারা বছর নৌকা তৈরী করে জীবিকা নির্বাহ করতো। বর্তমানে

বর্ষার শুরুর জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ় ও শ্রাবণ মাস শুধু নৌকা তৈরী করেন। এ বছর কাঠের দাম
বেশী থাকায় নৌকার দামও বেশী বলে জানান তারা। গত বছরের চেয়ে এবছর নৌকা
বিক্রির ক্রেতা কম বলে দাবী করেন নৌকা তৈরীর কারিগরেরা।