দীর্ঘ সময় লাইনে দাড়িয়েও মিলছে না টিসিবি’র সকল পণ্য

দীর্ঘ সময় লাইনে দাড়িয়েও মিলছে না টিসিবি’র সকল পণ্য

শেয়ার করুন

টিসিবি’র সুবিধা বঞ্চিত নিম্ন আয়ের মানুষ, দুর্বল নজরদারিতে উপেক্ষিত বিতরন নীতিমালা, দীর্ঘ সময় লাইনে দাড়িয়েও মিলছে না সকল পন্য

Patuakhali_Dist_map

।। জাহিদ রিপন, পটুয়াখালী ।।
করোনাকালীন সময়ে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাড়িয়েও পটুয়াখালীতে নিম্ন আয়ের মানুষের ভাগ্যে জুটছেনা টিসিবি’র কম মূল্যের পন্য। ট্রাক করে
বিক্রির নিয়ম থাকলেও যথাযথ তদারকি না থাকায় নি¤œ আয়ের সিংহভাগ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে টিসিবি’র সুবিধা থেকে। ডিলারদের বিরুদ্ধে
সাধারনের অভিযোগ, টিসিবি’র নিত্যপন্য সামগ্রী লোপাটের। অপরদিকে ডিলাররা বলছে, প্রাপ্যতার বিপরীতে চাহিদা রয়েছে বেশি। ফলে ডিপো
থেকে পন্যসামগ্রী আনার পর ট্রাকে করে বিক্রীর এক ঘন্টায় সব পন্য বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। এনিয়ে স্থানীয় প্রশাসন তাদের কঠোর অবস্থানের কথা জানালেও
টিসিবি’র নীতিমালা অনুসরন করছেন ডিলাররা।

টিসিবি সূত্রে জানা জায়, পটুয়াখালীতে ৩১জন টিসিবি’র ডিলার রয়েছে। ডিলারদের ট্রাক সেলে স্ব স্ব উপজেলা প্রশাসন এ কার্যক্রম তদারকি
করবে। শৃংখলা রক্ষায় নিম্ন আয়ের মানুষ লাইনে দাড়িয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ন্যায্য মূল্যে পন্য সামগ্রী কিনবে। যাতে দেশে দ্রব্যমূল্যের
বাজার স্থিতিশীল থাকে। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি ও কালো বাজারি নিয়ন্ত্রনে থাকে। জেলায় সিংহভাগ টিসিবি ডিলার রাজনৈতিক ক্ষমতা ও দাপটে
নিয়োগ পেয়েছেন।

নজরদারির দুর্বলতায় টিসিবি’র নীতিমালা অনুসরন করছেনা এসব ডিলাররা। অধিকাংশ ডিলার গত এক সপ্তাহে মাত্র দু’এক ঘন্টার জন্য টিসিবি পন্য
বিক্রী করেই পন্য শেষ হওয়ার কথা বলছে। অথচ সেই দু’এক ঘন্টার লাইনে দাড়িয়েও ডাল পেয়েছে তো চিনি পায়নি। চিনি পেয়েছে তো তে পায়নি, এমনই অভিযোগ নিম্ন আয়ের মানুষের। ফলে ডিলারদের ভর্তুকী দিয়েও নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে টিসিবি’র দ্রব্যসামগ্রী বিক্রয় নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।

জেলার কলাপাড়ায় ৩জন ডিলারের তথ্য অফিস বললেও ইত্যাদি ষ্টোর ও মার্জিয়া নামে দু’জন টিসিবি ডিলারের তথ্য জানা গেছে। লতিফ ষ্টোর’র লতিফ
খালাসি কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ায় তার ছেলের নামে ডিলার শিপ পরিবর্তনের আবেদন করেছেন, যা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এরমধ্যে কুয়াকাটায়
মার্জিয়া ষ্টোর’র স্বত্ত্বাধিকারী ৬জুলাই বরিশাল থেকে ২০০০ কেজি পন্য পাওয়ার কথা বলছে। ইত্যাদি ষ্টোরও ২০০০ কেজি পন্য পেয়েছে। অথচ অফিস
বলছে ২১০০ কেজি পন্য দেয়া হয়েছে।

টিসিবি’র বরিশাল সহকারী কার্যনির্বাহী কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, বরিশাল বিভাগে টিসিবি’র ২০২ জন ডিলার রয়েছে। ট্রাল সেল কোটা রয়েছে ২৪টা। বিভাগীয় শহরে প্রতিদিন ৫টি ট্রাক সেল, জেলা শহরে ২টি করে এবং বাকী গুলো উপজেলা ও পৌরশহরে পর্যায়ক্রমে ট্রাক সেল নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে বিক্রী করবে। যাতে প্রতি লিটার তেল ১শ’ টাকা, কেজি প্রতি চিনি ৫৫ টাকা, ডাল ৫৫ টাকা হারে কিনতে পারে নিম্ন আয়ের মানুষ।

টিসিবি ডিলার ইত্যাদি ষ্টোর’র প্রোপাইটার সাইদুর রহমান বলেন ’বরিশাল গোডাউন থেকে ১০জুলাই ১৯০০ কেজি পন্য পেয়েছি। তেল ১হাজার লিটার, ডাল ৫০০ কেজি ও চিনি ৪০০ কেজি। যা ওই দিনই বিকেলে কলেজের খোলা মাঠে ট্রাক সেলে ১ ঘন্টার মধ্যে বিক্রী শেষ।’

মার্জিয়া ষ্টোর’র প্রোপাইটার মোস্তাফিজ বলেন, ’৬জুলাই বরিশাল থেকে তেল, ডাল ও চাল পেয়েছি ২হাজার কেজি। যা ওইদিন বিকেল কুয়াকাটা
চৌরাস্তা সংলগ্ন ধানসিঁড়ি ডাক বাংলোর নীচে ট্রাক সেলে ঘন্টা খানেকের মধ্যে বিক্রী শেষ।’
টিসিবি পন্য বিক্রীর সময় উপজেলা প্রশাসনের তদারকি ছিল কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে দু’জন ডিলারই বলেছেন তারা মুঠো ফোনে ইউএনও’র
কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে ট্রাক সেল করেছেন। কলাপাড়া উপজেলা প্রশাসনের জারিকারক আবুল হোসেন মোল্লা ও নৈশ প্রহরী মামুন জানান, ১০ জুলাই টিসিবি’র লাইনে দাড়িয়ে শুধুমাত্র ৫লিটার তেল কিনতে পেরেছেন। ডাল, চিনি তারা পাননি।

কলাপাড়া ইউএনও আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক বলেন, ’টিসিবি ডিলারদের নীতিমালা অনুসরন করে পন্য বিক্রীর জন্য বলা হয়েছে। দু’এক দিনের মধ্যেই ডিলারদের আবারও ডেকে বিষয়টি বলা হবে। টিসিবি পন্য বিক্রীতে কোন রকমের অনিয়ম হলে কঠোর আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’