উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে পুনরায় বিজয়ী হতে চান মজিবুর রহমান

উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে পুনরায় বিজয়ী হতে চান মজিবুর রহমান

শেয়ার করুন

 

মেয়র মজিবুর রহমান
মেয়র মজিবুর রহমান

।। সালাহ উদ্দিন সৈকত, কালিয়াকৈর, গাজীপুর।।

গাজীপুরের কালিয়াকৈর পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে নেমে পড়েছেন। পদপ্রত্যাশীরা দিন-রাত পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায়, সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে নিজেদের পক্ষে ভোটারদের রাখার চেষ্টা করছেন। তফসিল ঘোষণা দেয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অনেকে ভোটের লড়াইয়ে নামার ঘোষণা দিয়েছেন। পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচার।

এদিকে বিএনপি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় দলীয় কোন প্রার্থী নেই। ফলে বর্তমান মেয়র বিএনপি নেতা হলে ও তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ২৮ নভেম্বর নির্বাচন করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

গাজীপুর জেলা শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার এবং রাজধানী ঢাকা থেকে উত্তর-পশ্চিমে কালিয়াকৈর উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত কালিয়াকৈর পৌরসভা। সাবেক শ্রীফলতলী, আটাবহ ও মৌচাক ইউনিয়নের আংশিক এলাকা নিয়ে ২০০১ সালে এ পৌরসভার যাত্রা শুরু হয়। তৎকালীন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ জিল্লুর রহমান উপজেলার সফিপুরে এর মূল ভবনের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন। পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে ১১/০৫/২০০৩ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করেন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম সরকার এবং ০২/০৭/২০০৩ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করেন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নুরুজ্জামান শরীফ।

পরবর্তী সময়ে বিএনপি জোট সরকার ক্ষমতায় আসলে বিএনপি নেতা মোঃ মজিবুর রহমান ০২/০৮/২০০৪ থেকে ১৭/১১/২০১১ সাল থেকে পৌর প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।২৬/১০/২০১১ সালে পৌরসভার প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে প্রায় ২৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে পরাজিত করে প্রথম মেয়র নির্বাচিত হয়। ২০১১ সালের ১৭ নভেম্বর শপথ গ্রহণের পর থেকে কালিয়াকৈর পৌরসভার মেয়র হিসেবে এখন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে আসছেন মোঃ মজিবুর রহমান।

সীমানা সংক্রান্ত জটিলতায় আদালতে মামলা থাকায় আর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। তিনটি ইউনিয়নের ১৭টি মৌজা ২৭.২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে গঠিত কালিয়াকৈর পৌরসভা একটি শিল্প অধ্যুষিত পৌরসভা।এ পৌরসভায় ছোট বড় মাঝারি শিল্প কারখানা রয়েছে প্রায় ৩০০ এবং স্থায়ী-অস্থায়ী মিলে মোট জনসংখ্যা রয়েছে প্রায় ৭ লক্ষ এবং ভোটার রয়েছে লক্ষাধিক।

কালিয়াকৈর পৌরসভা রয়েছে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি, বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি রেল স্টেশন, বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজ, আনসার একাডেমি,তালেবাবাদ ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র, খ্রিস্টান মিশনারী এবং শ্রীফলতলী জমিদার বাড়ি সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। পৌরসভারটি ৩১/০৫/২০১২ সালে ‘ক’ শ্রেণীতে উন্নীত হয়।

কালিয়াকৈর উপজেলার মাকিষবাথান এলাকায় অবস্থিত বর্তমান কালিয়াকৈর পৌরসভা কার্যালয় পৌরবাসীর চাওয়া-পাওয়া মিটিয়ে এটি আজ আধুনিক রূপ নিয়েছে।

এখনও পৌরসভার আরো কিছু উন্নয়ন প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন মেয়র মজিবুর রহমান। আর সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বর্তমান পরিষদ। কালিয়াকৈর পৌরসভার কার্যালয় যাত্রার শুরুতে ছিল কালিয়াকৈর উপজেলা চত্বরে। সেখানে নানা প্রতিবন্ধকতা মধ্যে কাজ করতে হতো পৌর প্রশাসকদের।

তিনি বলেন, যেদিন তিনি প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেন সেদিন থেকে তার ইচ্ছা ছিল কালিয়াকৈর পৌরসভাকে একটি আধুনিক ও মডেল পৌরসভায় পরিণত করা। সে লক্ষ্য নিয়ে তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর নতুন নতুন রাস্তা তৈরি, পুরানো রাস্তা মেরামত, রাস্তা প্রশস্তকরণ ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ লাইন স্থাপন এবং সড়ক বাতি স্থাপন নিয়ে কাজ করে আসছেন।

তিনি কালিয়াকৈর পৌরসভার নতুন সুন্দর একটি আধুনিক পৌর ভবন নির্মাণ করেন এবং পৌরবাসীর দুয়ারে সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ৩টি সার্কেল অফিস স্থাপন করে নিয়মিত সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করেন।

মেয়র বলেন,পৌরসভার বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। পৌর আইন অমান্য করে ভারী যানবাহন ও মাটির ট্রাক চলাচল করায় রাস্তা গুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সে কারণে বর্তমানে পৌর এলাকার কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা আরসিসি করে উন্নয়নের কাজ হাতে নিয়েছেন এবং ইতিমধ্যে বেশ কিছু রাস্তা আরসিসি করে উন্নয়নের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পৌরবাসীর জন্য বড় একটি সমস্যা ড্রেনেজ ব্যবস্থা।

তিনি বলেন, কালিয়াকৈর পৌরসভা যেমন উন্নয়ন হয়েছে,উন্নয়নের পাশাপাশি কিছু সমস্যারও সৃষ্টি হয়েছে। পৌরসভাটি শিল্পাঞ্চল হওয়ায় দিনদিন বসতবাড়ি সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। জনসাধারণের চাহিদা থাকায় নিচু জমি ভরাট করে ঘরবাড়ি ও শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠার কারণে অল্প বৃষ্টিতে পানির স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হয়ে পৌর এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। পৌর এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ নিমিত্তে ইতিমধ্যে প্রায় ৩৩ কিলোমিটার ড্রেন খনন এবং যেসব স্থানে অল্প বৃষ্টিতেই পানির স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হয় সেই স্থানকে চিহ্নিত করে ৫০ কিলোমিটারের উপরে ড্রেন খনন করার কাজ চলমান রয়েছে বলে জানান মেয়র। তবে পৌর এলাকার ময়লা-আবর্জনা বা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা জন্য প্রয়োজনীয় জমি না পাওয়ায় এখনো ময়লা নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানান মেয়র।

এছাড়া রাজধানীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতিকরণে স্কুল,কলেজ,মসজিদ, মাদ্রাসা ও মন্দিরসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের পাশাপাশি সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচির অংশ হিসেবে অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে ১০,৪৬০টি পরিবার অর্থাৎ ৬০ থেকে ৭০ হাজার মানুষকে পুষ্টি কার্ডের আওতায় আনা হয় যার দ্বারা একটা পরিবার বিনামূল্যে ঔষধ, বিভিন্ন টেস্ট, এম্বুলেন্স সেবা, গর্ভবতী মায়ের সিজারসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে আসছে।

পৌরসভার পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে পৌর এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য ৭৮ কিলোমিটার পাইপ লাইন বসানোর কাজ চলছে। এই কাজ সম্পন্ন হলে নাগরিকদের বিশুদ্ধ পানির অভাব দূর হবে।

চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও মাদক রোধে পৌরসভার জনগুরুত্বপূর্ণ প্রায় ৮০ ভাগ রাস্তায় সড়ক বাতি স্থাপন করা হয়েছে।

পৌর এলাকায় ছোট ছোট মাঠ থাকলেও এখনও কোন স্টেডিয়াম না থাকায় অতি দ্রুত একটি আধুনিক দৃষ্টিনন্দন মানসম্মত স্টেডিয়াম নির্মাণের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি ডিউ লেটার দিয়েছেন বলে জানান মেয়র।

এছাড়া একটি স্থায়ী, জমজমাট ও আধুনিক কমিউনিটি সেন্টার কাম অডিটোরিয়াম, একটি আধুনিক পৌর পার্ক, প্রতিটি ওয়ার্ডে কবরস্থান নির্মাণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানান মেয়র মজিবুর রহমান।

আরও বলেন, পৌরসভাকে মডেল হিসেবে গড়ে তুলতে আধুনিক মাস্টারপ্ল্যান হাতে পেয়েছি। মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ সবকিছুর উন্নয়ন করতে হবে। সে ক্ষেত্রে ঢাকা ও আমাদের নিকটবর্তী গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এবং সাভার পৌরসভার মত গ্রামকে শহরে পরিণত করতে হবে।

সরকার পৌরসভাকে সবসময় সহযোগিতা করছে এবং ভবিষ্যতেও সহযোগিতা করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। গাজীপুর ১ আসনের এমপি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী সেভাবে সহযোগিতা করছেন। জনগণও আমাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পৌরসভার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।

আগামি ২৮ নভেম্বর নির্বাচনের মাধ্যমে আবার ও বিজয়ী হয়ে কালিয়াকৈর পৌরসভা কে আধুনিক মডেল পৌরসভা হিসেবে গড়ে তুলতে চান বর্তমান মেয়র মজিবুর রহমান।